সঠিক যোগ্যতার ডাক্তারের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো ? ... ডাক্তার চিনে নিন পর্ব-৩ ( হার্বাল চিকিৎসক )
আমাদের দেশে তিনটি স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে; অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও হার্বাল। আমরা রোগাক্রান্ত অবস্থায় উক্ত তিন ধরনের চিকিৎসার কোন একটি বা একাধিক গ্রহন করে থাকি। কিন্ত আমরা কি বুঝি কোন ডাক্তারের যোগ্যতা কতখানি? সঠিক যোগ্যতার ডাক্তার নির্বাচন না করলে হয়ত রোগীর অযথা ভোগান্তি হতে পারে। তাই ডাক্তারদের যোগ্যতা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। চিকিৎসকের যোগ্যতা সম্পর্কে জানার ধারাবাহিক আলোচনার ৩য় পর্ব: হার্বাল চিকিৎসক
হার্বাল চিকিৎসাব্যবস্থা
হার্বাল বাগাছ-গাছড়াদ্বারা চিকিৎসাসবচেয়ে প্রাচীনচিকিৎসা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে ইউনানী (মুসলমানকর্তৃক বিকশিত) ও আয়ুবের্দী (ভারতীয়কর্তৃক উদ্ভাবিত) এই দুটিস্বীকৃত হার্বালচিকিৎসা রয়েছে। আসুন এবার এ ব্যবস্থারচিকিৎসকদের যোগ্যতা সম্পর্কে জানা যাক।
সার্টিফিকেটহীন সাধারণচিকিৎসক: সাধারণভাষায় আমরাএদের কবিরাজহিসেবে অবহিতকরে থাকি। এ ধরনের চিকিৎসকগণ নিজেরাঔষধ তৈরিকরেন ওবিভিন্ন কোম্পানীরঔষধ বিক্রয়করেন। এ ধরনের চিকিৎসকবৃন্দেরজ্ঞান সীমিতএবং শুধুমাত্র প্রাথমিকপর্যায়ের অতিসাধারণ রোগচিকিৎসার উপযুক্ত।
ডিপ্লোমা: আমাদেরদেশে ডি.ইউ.এম.এস (ইউনানী) এবং ডি.এ.এম.এস ( আয়ুর্বেদী) দ্বারাহার্বাল ডিপ্লোমাবোঝানো হয়। এ ধরনের চিকিৎসকগণ বাংলাদেশেরবিভিন্ন ডিপ্লোমাইউনানী ওআয়ুবের্দী কলেজ হতে কোর্স সম্পাদনকরে ইউনানীও আয়ুবের্দীবোর্ড স্বীকৃতসনদ লাভকরেন।এ ধরনেরচিকিৎসকগন প্রাথমিক পর্যায়ের সাধারণ রোগেরচিকিৎসা করারযোগ্যতা রাখেন। উল্লেখ্য কখনো কখনো দেখাযায় অধ্যয়নরতঅবস্থায় (ডিপ্লোমাপাশ নাকরেই) অনেকেইচিকিৎসা সেবাদেয়া শুরুকরেন, যারোগীদের জন্যভোগান্তির কারণ হতে পারে।
স্নাতক বা এমবিবিএস সমমান : আমাদের দেশেবি.ইউ.এম.এস(ব্যাচেলর অব ইউনানী মেডিসিন এন্ডসার্জারী) এবং বি.এ.এম.এস (ব্যাচেলরঅব আয়ুর্বেদীকমেডিসিন এন্ডসার্জারী) ডিগ্রীকে এমবিবিএস সমমান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের চিকিৎসকগণ দেশেরএকমাত্র সরকারীইউনানী আয়ুর্বেদীকমেডিকেল কলেজহতে ৬বছর মেয়াদীকোর্স ( ঢাকাবিশ্ববিদ্যায় নিয়ন্ত্রিত) সম্পাদন করার পরস্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে রেজিস্ট্রেশন লাভকরেন।বি.ইউ.এম.এস(ব্যাচেলর অব ইউনানী মেডিসিন এন্ডসার্জারী) এবং বি.এ.এম.এস (ব্যাচেলরঅব আয়ুর্বেদীকমেডিসিন এন্ডসার্জারী) ডিগ্রী বাংলাদেশে হার্বাল চিকিৎসাব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ডিগ্রী। তাই হার্বাল ঔষধের চিকিৎসারজন্য এধরনের চিকিৎসকইউপযুক্ত।
বাংলাদেশের বিভিন্নসরকারী হাসপাতালে বি.ইউ.এম.এস / বি.এ.এম.এস চিকিৎসকগণ মেডিকেলঅফিসার হিসেবেকর্মরত আছেন।
ভাল হারবালচিকিৎসক যেভাবেচিনবেন
আমাদের দেশেহারবাল চিকিৎসারনামে প্রতারণাবেশি হয়। তাই বলেএই চিকিৎসাপদ্ধতি এড়িয়েযাওয়া বুদ্ধিমানেরকাজ নয়। ভাল মানের চিকিৎসক খুঁজতেহবে।হারবাল চিকিৎসক নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা-
এমবিবিএস সমমান (বিএএমএস/বিইউএমএস)ডিগ্রীডিগ্রীধারী চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নেয়াইউত্তম। কারণ এর চেয়ে নিম্নতর যোগ্যতার ( ডিপ্লোমা প্রাপ্ত কিংবা কবিরাজ ) চিকিৎসকের জ্ঞান সীমিত তাই রোগের চিকিৎসা সফল নাও হতে পারে।
যে চিকিৎসক আপনাকেগ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করতে চাইবেতার কাছেকখনোই চিকিৎসানেয়া যাবেনা। কারণ চিকিৎসা শতভাগ ফলপ্রসূ হবে তা কখনোই বলা যায় না। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে গ্যারান্টি মানেই প্রতারণা।
যে চিকিৎসক বলেটেস্ট করারপ্রয়োজন নেইতার নিকটচিকিৎসা নানেয়াই উত্তম। কারণ রোগ চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোগ নির্ণয়। সঠিক রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয়। আর রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়।
এলোপ্যাথিক চিকিৎসক যেঔষধ খেয়েযেতে/ ব্যবহারকরতে ( যেমনইনসুলিন ) বলেছেন সে ঔষধ কোনচিকিৎসক হঠাৎকরে বন্ধকরতে বললেসেই চিকিৎসকেরনিকট চিকিৎসানেয়া যাবেনা।কারণ কিছু কিছু অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ রয়েছে যা এক নাগাড়ে দীর্ঘদিন সেবন/ব্যবহার করলে দেহে তার প্রতি কিছুটা নির্ভরশীলতা তৈরি হয় এবং ঔষধগুলো নিয়ম অনুযায়ী ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হয়। যদি আকস্মিক ভাবে ঔষধটি বন্ধ করা হয় তবে দেহে বিশৃংখল অবস্থা দেখা দিতে পারে।
সকল রোগীদের আরোগ্য কামনায়
সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম